প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাঃ- একুশের নির্বাচনের মস্ত ধাক্কা খাওয়ার পর বিজেপি ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে। বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে বিজেপি চাইছে নতুন করে সাজতে। যদিও একুশের নির্বাচনের পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নিয়েছিল বিজেপি। তথাপি সাফল্য ধরা দেয়নি। তাই ফের নতুন করে রদবদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বিজেপিতে।সম্প্রতি সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারীকে মুখ করে বঙ্গ বিজেপি রাজ্যে তাঁদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ চলে গিয়েছেন খানিক আড়ালে। তবু তাঁর অনুগামীর সংখ্যা নেহাত কম নেই। তাই তাঁকে গুরুত্ব দিতে হৃচ্ছেই। কিন্তু প্রতিটি কর্মসূচিতেই বিজেপির বঙ্গ নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। বিভিন্নতা প্রকট হয়ে উঠছে নানা বিষয়ে।সুকান্ত-শুভেন্দুরা তৃণমূলকে ধাক্কা দিয়ে ডিসেম্বর মাসের লক্ষ্যমাত্রা কাঁড়া করেছেন। তবে তার আগে ডিসেম্বরেই বিজেপিকে বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে। বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের অনেক নেতা রদবদলের শিকার হতে পারেন। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের গোটা কাঠামোও বদলে যেতে পারে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বঙ্গ বিজেপিকে নতুন রূপে সাজাতে বদ্ধপরিকর। সেইমতো ভাবনা-চিন্তা চলছেবিজেপির নীচের তলায় একটা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এতদিন দেখা গিয়েছে বিজেপিতে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন নব্যরা। আদিরা ব্রাত্য রয়ে যাচ্ছেন। একুশের নির্বাচনেও আদিরা ব্রাত্যের দলে ছিলেন। অনেকে বসে গিয়েছিলেন। ফলে তৃণমূলের সুবিধা হয়ে গিয়েছিল। নতুনদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে ভরাডুবি হয়েছিল বিজেপিতে। জয় দূরস্ত রয়ে গিয়েছিল। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া প্রায় সব নতুনরাই হেরে বসেছিলেন।একুশের নির্বাচনের পরে উপনির্বাচনে এবং পুরসভা নির্বাচনেও বিজেপি হতাশাব্যাঞ্জক ফল করেছে। ফলে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কঙ্কালসার চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছে আবার। বিজেপি আদি-নব্য দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। বিজেপিতে কোন্দলে ভাঙনও তীব্রতর হয়েছে। বিজেপি ছেড়ে অনেকে ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলে। আর যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা বেসুরো। এই অবস্থা থেকে বিজেপি বেরিয়ে আসতে পারেনি এখনও। সেই চেষ্টা তবে জারি রয়েছে এখনও।এই পরিস্থিতিতে বিজেপিকে খানিক অক্সিজেন দিয়েছে ইডি-সিবিআই। তৃতীয় মেয়াদে সরকারে বসার পর এক বছর যেতে না যেতেই মমতা বন্যোআইপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটে বিরাট ধাক্কা লেগেছে দুর্নীতির। মমতার সরকারের সেকেবন্ড মিনিস্টার পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষা দুর্নীতিতে ইডি-সিবিআইয়ের জালে বন্দি হয়েছেন। হেভিওয়েট শাসক-নেতা অনুব্রত মণ্ডল গরুপাচার দুর্নীতিতে কারান্তরালে। এই অবস্থায় বিজেপি আরও চাপে ফেলতে চাইছে তৃণমূলকে। ইডি-সিবিআই দিয়ে চাপ বাড়াতে চাইছে।তারপর তৃণমূলকে ভাঙার হুঙ্কার ছাড়া হয়েছে। মিঠুন চক্রবর্তীকে রাজ্যে নিয়ে এসে বিজেপি তৃণমূলে ভাঙার বাতাবরণ তৈরি করেছে। মিঠুন হুঙ্কার ছেড়েছেন তৃণমূলের ২১ জন তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন। সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষরা আবার এই সংখ্যাকে ৪০-এ টেনে নিয়ে গিয়েছেনষ। ২০১৯-এর আগে তৃণমূল ভাঙার যে আবহ তৈরি করা হয়েছিল, এবার সেই খেলা শুরু করতে চাইছেন বঙ্গের নেতারা।কিন্তু বিগত দেড় বছর ধরে বিজেপির বঙ্গ নেতৃত্বের কাজে খুশি নন অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডারা। তাঁরা পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপি নেতত্ব নিয়ে আলাদা করে ভাবছে। ডিসেম্বরে বিজেপি বঙ্গ নেতৃত্বকে আলদা করে সাজাতে পারে। বেশ কিছু নেতা পদচ্যুত হতে পারেন। পুরনো ও নতুনদের সমন্বয়ে এবার রাজ্য কমিটি গড়া হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।দিলীপ ঘোষ বলেন, ২০২২-এর ডিসেম্বরে বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন হবে। একইসঙ্গে আমাদের রাজ্যের হতে পারে। সাংগঠনিক নির্বাচন ও রদবদল করেই বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রণনীতি তৈরি করতে পারে ২০২৪-এর। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে রদবদল হবে বা নির্বাচন যা হবে, সব ঠিক করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।