প্রতিনিধি:-
একদিকে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন নিয়ে টানটান জল্পনা, অন্যদিকে তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকরের সঙ্গে রঙ্গরসিকতায় মাতলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট । মঙ্গলবার রাজস্থান বিধানসভায় একটি সংবর্ধনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল ধনকর৷ সেখানেই একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মজার প্রশ্ন করেন কংগ্রেস নেতা গেহলট। তিনি ধনকরের কাছে জানতে চান, ‘মমতার মত একজন কড়াধাঁচের নেত্রীর উপর কী এমন জাদু করলেন আপনি, যে তিনি ও তাঁর দল উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনে অংশই নিল না?’তাঁর দিকে ধেয়ে আসা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর ফিরে গিয়েছেন গেহলটের কাছেই৷ উপরাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছেন আমি তাতে সম্মতি জানিয়েছি৷ আমি রাজনীতির কিছু বুঝি না৷ বরং মুখ্যমন্ত্রী গেহলটই ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন কীভাবে এবং কেন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে৷’ এরপর জগদীপ ধনকর নিজের অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা ভাবুন৷ আমি কি কখনও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা সংবিধান এবং আইনের বিরুদ্ধে গিয়েছে৷ আমি তাঁর (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) পদমর্যাদাকে নিশানা করে কিছু বলিনি৷ তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই৷’ দুই বর্ষীয়ান নেতার এমন কথোপকথনে হাসির রোল ওঠে রাজস্থান বিধানসভায়। হাসিতে যোগ দিতে দেখা যায় স্পিকার সিপি জোশিকেও।প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী ঐক্য মজবুত করার ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ সক্রিয়তা দেখালেও অগাস্ট মাসে শেষ মুহূর্তে বিরোধী জোটের মধ্যে মতানৈক্যের জেরে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভা ভোটে ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে সেটা অন্য বিষয় যে তৃণমূল কংগ্রেস ভোটে অংশ নেওয়ার পরেও, এনডিএ প্রার্থী ধনকরের জয় নিশ্চিত ছিল। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীরা জোট প্রার্থী ঘোষণার করার পরেই কিছুদিনের মধ্যে তৃণমূল জানায়, তারা ভোটদানে বিরত থাকবে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন সিদ্ধান্ত জগদীপ ধনকরের জন্য শাপে বর হয়েছিল বলেও মনে করে রাজনৈতিক মহল। তাঁর জয়ের পথ প্রশস্ত হয়েছে। এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেই গেহলট জানতে চান মমতা-জগদীপের মধ্যে সমীকরণ ঠিক কেমন ছিল?তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের দুজনের সম্পর্ক তো দেশে আলোচনার বিষয় ছিল। আপনি সেখানে (পশ্চিমবঙ্গে) তিন বছর ছিলেন। কী জাদু করলেন যে উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন? দয়া করে আমাদের গোপন কথা বলুন।’ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘সাধারণত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি কীভাবে ও কেন নেওয়া হয়েছে, সেটা বুঝি। আপনি রাজ্যপাল থাকাকালীন আপনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু পুরো দেশকে অবাক করে তিনি জানান তৃণমূল কংগ্রেস উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবে না।’ এরপর কিন্তু গেহলট ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘এই ঘোষণার পর তো আপনার কোনও ঝঞ্ঝাট ছাড়াই আপনার এগিয়ে যাওয়ার ছিল, আর ঠিক সেটাই হয়েছে।’ উত্তরে মজা করে ধনকর বলেন, ‘আমি এর আগে বসুন্ধরা রাজের(রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী) কাছে এ বিষয়ে সাহায্য চেয়েছিলাম। বলেছিলাম কিছু জাদুমন্ত্র দিন। যদিও তাতে কাজ হয়নি।’তবে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে দুই বর্ষীয়ান নেতার এহেন রঙ্গরসিকতার বিষয়টিকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না তৃণমূল । দলের বর্ষীয়ান সাংসদ তথা রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দু শেখর রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাদুমন্ত্র তৃণমূল কংগ্রেসের নয়, বরং কংগ্রেসের দরকার। একটা দল যারা দলীয় নির্বাচন করাতে গিয়ে হিমশিম খায়, তারা অন্যের চাকায় তেল না দিয়ে, নিজেদের দিকে তাকাক। জাদুমন্ত্রের প্রয়োজন কাদের বেশি তা সহজেই বোঝা যাবে।’ তিনি এও বলেন, ‘বিষয়টি হাসিঠাট্টা নিয়ে হলেও মনে রাখা উচিত, এই রসিকতা এক মহিলার উদ্দেশ্যে করা যিনি কিনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সিদ্ধান্ত, দলের সিদ্ধান্ত বুঝবে সেই বোধ সকলের থাকে না। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর জাদু চালাবেন এমন সাধ্য কারও নেই।’ দলের আরেক বর্ষীয়ান সাংসদ ও নেত্রী মালা রায় বলেন, ‘এক রাজ্যের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিনা রসিকতা করছেন অন্য এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়ে, যা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বিরল৷ রঙ্গরসিকতা খারাপ নয়, কিন্তু স্থান কাল পাত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত ছিল রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর ভোলা উচিত না তিনি একজন মহিলার উদ্দেশ্যে এসব চটুল, স্থুল রসিকতা করছেন। রাজনীতিতে সৌজন্যতাই শেষ কথা। কংগ্রেস যদি তা রাখতে না পারে তবে তা দুর্ভাগ্যের।