তৃণমূলের শীর্ষ, মাঝারি, ছোট নেতানেত্রীরা বলে থাকেন, তাঁদের একজনই নেত্রী। তিনি বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে গ্রুত গতিতে উত্থান হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে বসানো হয়েছে। তিনিই নাকি তৃণমূলের অলিখিত দুনম্বর নেতা। আবার কেউ কেউ বলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন বাইরে ছিলেন তিনিই ছিলেন তৃণমূল ও সরকারের দুই নম্বর। ফলে সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে ঢোকার পরে নানা চর্চা বিভিন্ন মহলে। আর সেই জল্পনা উস্কে দিচ্ছে বিরাধী শিবির।অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতার ছিল বৃহস্পতিবারের সব থেকে বড় ঘটনা। ১৮ বছর ধরে জেলা সভাপতি থাকা কোনও দলের নেতার গ্রেফতার সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছে কিনা কেউ মনে করতে পারছেন না। এব্যাপারে রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, লক্ষ্য করে দেখুন দিদির টিমের
লোকেদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু ভাইপোর টিমের লোকেদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গরু চুরি তো কেষ্ট একা করেননি। সেখানেবিএসএফের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশও জড়িত। তিনি বলেন, কেষ্টর ঢোল ফেটেছে বলে সব দোষ ওর তা হতে পারে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে থাকেন
পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিংবা অনুব্রত মণ্ডল তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে জড়িত। তাঁরা দুজনেই দলনেত্রীর কাছের বলেই পরিচিত। সেই নেতাদের এহেন পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ এখন বিরোধীদের। তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেই কথাই তুলে ধরতে চাইছেন বিরোধীরা।অধীর চৌধুরী ইঙ্গিত করেছে গরু পাচারে মুর্শিদাবাদে কাজ করে যাওয়া একাধিক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক জড়িত। তিনি জানিয়ে দেন সিবিআই কিংবা ইডি ডাকল অধীর চৌধুরী কোনও হাসপাতালে যাবে না। তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতারগ্রেফতারিতে তিনি বলেছেন সবে মাত্র চুনোপুটি ধরা পড়েছে, এখনও রাঘব বোয়ালরা বাইরে রয়েছে। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি নিয়ে তিনি বলেছেন সবটাই হিমশৈলের চূড়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে অধীর চৌধুরী বলেছেন, নেত্রীর মদতেই জেলায় জেলায় সন্ত্রাস করছে তৃণমূল কংগ্রেস।বৃহস্পতিবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত অনুব্রত মণ্ডলকে ১০ দিনের সিবিআই হেফাজত দিয়েছে। বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী অনুব্রত মণ্ডলের শারীরিক খোঁজ খবর নিয়ে জানিয়েছেন কোনও কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষার দরকার পড়লে, তাঁকে যেন কলকাতার কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় অনুব্রত মণ্ডলকে বোলপুরের বাড়ি থেকে সিবিআই তুলে আনলেও, বিকেলে তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০-র বি এবং দুর্নীতি দমন আইনের ৭, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সিবিআই-এর তরফ থেকে।আদালতে অনুব্রত মণ্ডল নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন শ্বাসকষ্ট ছাড়াও বুকে ব্লকেজ রয়েছে। রয়েছে উচ্চরক্তচাপ, ফিসচুলা ও কিডনির সমস্যা। সেই অবস্থায় সন্ধে প্রায় সাতটা নাগাদ আসানসোল থেকে যাত্রা শুরু করে সিবিআই অনুব্রত মণ্ডলকে রাত পৌনে তিনটে নাগাদ কলকাতায় নিয়ে আসে। শুক্রবার তাঁকে কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবে সিবিআই।