প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাঃ-
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি, নবম-দশম স্কুল শিক্ষক নিয়োগের পর এবার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এলো,যেখানে সরাসরি রাজ্যের মন্ত্রীর যোগ রয়েছে বলে মনে করছে হাইকোর্ট। নিয়োগের তালিকায় থাকা অন্য প্রার্থীকে সরিয়ে মন্ত্রীর মেয়ের নাম রয়েছে মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।শুধু তাই নয়, রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে রাত আট’টার মধ্যে সিবিআই জেরা’র মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। রাত ৮টার মধ্যেই সিবিআই তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে শুধু তাই নয়, পরেশ অধিকারীকে অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়ার জন্যে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীকেও সুপারিশ করেছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ।তবে এটি নির্দেশ নয় বলেও স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে। তবে আদালতের পর্যবেক্ষণ, দুর্নীতি হয়েছে স্পষ্ট।
তবে অঙ্কিতা অধিকারী অর্থাৎ যিনি কিনা পরেশ অধিকারীর মেয়ে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলেই সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান পর্যবেক্ষণ। এদিন আদালত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, প্রভাব ছাড়া সিবিআইকে এই তদন্ত করতে হবে। প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থাই সিবিআই নিতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে,তবে রাতের মধ্যে সিট গঠন করে এই নির্দেশ কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে।আর এহেন নির্দেশ সামনে আসার পরেই চরম অস্বস্তিতে রাজ্য প্রশাসন। জানা যায়, এই মুহূর্তে পরেশ অধিকারীর মেয়ে কোচবিহারের একটি স্কুলে কর্মরত। বলে রাখা প্রয়োজন, ২০১৮-তে স্কুলে চাকরি পান পরেশ-কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী। এসএসসির পুরনো তালিকায় ১ নম্বরে নাম ছিল ববিতা বর্মনের। নতুন মেধা তালিকায় ২ নম্বরে নেমে আসেন ববিতা বর্মন। আগে না থাকলেও নতুন মেধা তালিকায় ১ নম্বরে মন্ত্রী-কন্যার নাম থাকার অভিযোগ। মেধা তালিকায় নাম নেই, কী করে চাকরি পেলেন মন্ত্রী-কন্যা? আর এই বিষয়কে মাথায় রেখেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ববিতা বর্মন।আজ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। সেখানেই এসএসসি’র চেয়ারম্যানকে অনলাইনে ডেকে পাঠানো হয়। মূলত অঙ্কিতা অধিকারী এবং ববিতা বর্মন কত নম্বর পেয়েছে, মেধা তালিকার কোন পর্যায়ে রয়েছে এই সমস্ত বিষয়ে তথ্য জানতেই এসএসসি’র চেয়ারম্যানকে রাতারাতি তলব করা হয়। কোথায় কোন স্কুলে চাকরি করছে না করছে না এই বিষয়েও তথ্য তলব করা হয় কিন্তু মামলার শুনানিতে এসএসসি চেয়ারম্যান যে তথ্য দেন তা একেবারে চমকে দেওয়ার মতো।দেখা যায় রাজ্যের মন্ত্রীর মেয়ে মোট নম্বর পেয়েছেন ৬১। যার মধ্যে ৩০ নম্বর অ্যাকাডেমিতে এবং অন্য ৩০ বিষয় ভিত্তিক। কিন্তু মামলাকারীর নম্বর অনেক বেশী বলে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, পার্সোনাল টেস্টের কোনও নম্বরই নেই মন্ত্রির মেয়ের। আর এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে! কীভাবে কম নম্বর পেয়েও চাকরি পেয়ে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।এসএসসি’র এই তথ্য হাতে পাওয়ার পরেই কলকাতা হাইকোর্টের কাছে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। দুর্নীতি হয়েছে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় আদালত আর এর শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছে বলেও মনে করছে হাইকোর্ট। আর সেই কারণে সিবিআই তদন্তের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের।