প্রতিনিধি:-
পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আস্থা ভোট। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ধরে রাখতে পারবেন কিনা সেই নিয়ে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে আস্থা ভোটের আগে দেওয়াল লিখন থেকে স্পষ্টতই বোঝা গিয়েছে যে অলৌকিক কিছু না হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে ইমরান খানকে।এরই মধ্যে অনাস্থা ভোটের আগে শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন ইমরান খান। এদিন ভাষণে একাধিক বিষয় উপস্থাপন করেন তিনি।
বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে এনে ভারতের কথা উল্লেখ করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, “ভারত আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র। ওদের থেকে শেখা উচিত। সার্বভৌম রাষ্ট্র হওয়ায় ওদের ওপর কোনো বিশ্বশক্তি ছড়ি ঘোরাতে পারে না।” অর্থাত্ ভারতের স্বাধীন বিদেশনীতির ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ভারতবর্ষকে তিনি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি জানেন। কোনও বিদেশি শক্তি ভারতের বিদেশ নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে না। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আরএসএস-এর মতাদর্শই ভারতবর্ষ এবং পাকিস্তানের মধ্যে ভাঙনের একমাত্র কারণ।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত ভেঙে দেওয়া ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নতুন করে চালু করেছে। এই প্রসঙ্গে আদালত জানিয়ে দেয়, সরকারের হঠাত্ করে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং ডেপুটি স্পিকারের রায় সম্পূর্ণভাবে সংবিধানবিরোধী। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন ভাষণে ইমরান খান জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। ডেপুটি স্পিকার যখন তদন্ত করছিলেন সেই সময় তিনি অত্যন্ত বিচলিত ছিলেন। তাঁর দাবি, সুপ্রিমকোর্টের উচিত্ ছিল ডেপুটি স্পিকারের সঙ্গে তদন্ত করা। তিনি জানান, বাইরে থেকে নিয়ে আসা সরকারকে তিনি মেনে নিতে নারাজ।
এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ এখনও অব্যাহত। যুদ্ধের সূচনালগ্নেই মস্কোয় গিয়েছিলেন ইমরান খান। এর ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমের একাধিক দেশ। এদিন ভাষণে তিনি পাকিস্তান সরকারের পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেছেন আমেরিকাকে। বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গে বলেন, তিনি নিজেও জানেন না কে, কীভাবে কাকে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি যেখানে তাঁর দেশ এবং ২২০ মিলিয়ন নাগরিকের প্রধান সেখানে তাদেরকে যদি বিদেশী শক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বেঁচে থাকতে হয় তাহলে তাদের স্বাধীনতা নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়।
প্রসঙ্গত, অরাজকতার অভিযোগে পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী শিবির অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে। এর ভিত্তিতে গত রবিবার অনাস্থা ভোট সংঘটিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্বাচন বাতিল করে দেন ডেপুটি স্পিকার। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীও প্রেসিডেন্টের কাছে অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার আর্জি জানান। ডেপুটি স্পিকারের রায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। এরপর বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচন বাতিলের সিদ্ধান্তকে খারিজ করে এবং শনিবার ফের অনাস্থা ভোটের নির্দেশ দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশেই মুশকিলে পড়েন ইমরান খান। কারণ ভোটাভুটি হলে সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে অ্যাসেম্বলিতে তাঁর হার নিশ্চিত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি মোটেই খুশি নন। এদিন এই প্রসঙ্গ টেনে এনেই সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় ইমরান খানকে। তিনি বলেন, কেবলমাত্র জনগণই তাঁকে ফের ক্ষমতায় ফেরাতে পারবে। প্রয়োজন হলে তিনি রাস্তায় নামতেও পিছপা হবেন না। এছাড়াও দেশবাসীর কাছে তিনি আর্জি জানান যাতে সকলে মিলে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। কারণ সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ না করলে কেউই বাঁচতে পারবে না।