প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাঃ-
বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনে শেষ দিনে আর এই দিনই বীরভূমের বগটুইকাণ্ডকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠল বিধানসভা। বিধানসভার ভিতরে এক বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকলেন সবাই। ওয়েলেই তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। চলে ধাক্কাধাক্কি যা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। আর এই হাতাহাতির জেরে রক্তও ঝরেছে। যদিও এই ঘটনার জন্য একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিজেপি ও তৃণমূল বিধায়করা। আর এই ঘটনায় রাজ্যের শাসকদলের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য ।
অমিত মালব্য টুইটারে বোঝানোর চেষ্টা করেন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি। তাঁর দাবি ছিল,এই রাজ্যে প্রতিবাদের কোনও ভাষা নেই বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল সরকার । আজ সে ঘটনা আরও এক বার প্রমাণিত হল। টুইটারে সঙ্গে বিধানসভায় হওয়া হাতাহাতির একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। আর তার ক্যাপশনে তিনি লেখেন,”বিধানসভায় চরম হট্টগোল বাংলার রাজ্যপালের পর এবার তৃণমূল বিধায়কদের হাতে বিজেপি বিধায়কদের হেনস্থার শিকার হতে হল। আসলে বিজেপি বিধায়করা রামপুরহাট গণহত্যা নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা চেয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী আড়াল করার চেষ্টা করছেন?”উল্লেখ্য, ৭ মার্চ বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার দিনও উত্তাল হয়ে উঠেছিল বিধানসভা। পুরভোটে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের
অভিযোগ তুলে বিধানসভায় সরব হয় বিজেপি । রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করার আগেই উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন বিজেপি বিধায়করা, বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। নির্দিষ্ট সময়ের ১ ঘণ্টারও বেশি সময় পর সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা পালন করতে ভাষণের প্রথম ও শেষ লাইন পড়ে বিধানসভা ছাড়েন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।আর এই ঘটনার পরই রাজ্যপালকে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। তৃণমূলের মহিলা বিধায়করা তাঁকে হেনস্থা করেছিল বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। আর অধিবেশনের শেষ দিনই ফের উত্তাল হয়ে উঠল বিধানসভা।
বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুইয়ের নৃশংসতা নিয়ে বিধানসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা। সেই নৃশংস ঘটনা নিয়ে আলোচনার দাবি তুলতে থাকেন তাঁরা। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। সেইসময় বিজেপি এবং তৃণমূল বিধায়কদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। রীতিমতো তুলকালাম বেঁধে যায়। বিধায়করা ধস্তাধস্তি করতে থাকেন যা হাতাহাতিতে গড়ায়।
ধস্তাধস্তির জেরে বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার পোশাক ছিঁড়ে গিয়েছে, তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের নাক ফেটেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, অসিতকে বিধানসভার মেঝেতে মারা হয়। দ্রুত তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চুঁচুড়ার বিধায়কের অভিযোগ, মহিলা বিধায়কদের হেনস্থা করা হচ্ছিল। সেইসময় প্রতিবাদ করায় শুভেন্দু নাকে ঘুষি মারেন।
এদিকে বিধানসভায় এই ঘটনার পরই বিজেপির ৫ বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee)। সেই তালিকায় রয়েছেন শুভেন্দু, দীপক বর্মণ, মনোজ টিগ্গা, নরহরি মাহাতো, শংকর ঘোষ। তাঁদের বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব পেশ করেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং উদয়ন গুহ। তারপর ওই পাঁচ বিধায়ককে বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করেন অধ্যক্ষ। আগামী অধিবেশন পর্যন্ত তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া, স্পিকার জানিয়েছেন, সোমবারের এই ঘটনায় বিধানসভার সম্পত্তির কী কী ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাসপেন্ড হওয়ার পর শুভেন্দু জানান, অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তে খুশি তিনি। কারণ মানুষের কণ্ঠস্বর তুলতে গিয়ে তাঁরা সাসপেন্ড হয়েছেন।