শিলিগুড়ি, ইং ১৮ই আগস্ট ‘ ২০১৮ : মরণোত্তর অঙ্গদান করে তিন জন রোগীর নতুন জীবন দিয়ে এক অনন্য নজীর গরল শিলিগুড়ির কিশোরী মল্লিকা মজুমদার এবং তার পরিবার । চিকিৎসাধীম শিলিগুড়ির সূর্যসেন কলোনী – ই ব্লকের পনেরো বছরের মল্লিকা মজুমদারের কানের রোগর সংক্রমণের থেকে মস্তিষ্কে সংক্রমণের ফলে ব্রেন ডেথ হয় কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে। হতদরিদ্র মল্লিকার বাবা ও তার পরিবারের লোকেরা যখন জানতে পারেন মল্লিকাকে আর ফিরে পাবেন না তারা, নিরুপায় হয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে মল্লিকার মরণোত্তর অঙ্গদানে অন্য কারও নতুন জীবন ফিরে পাবে এতেই রাজি হন তারা। তাই মল্লিকার পরিবারের লোকেরা চোখের জলে অন্যের মধ্যে তার বেঁচে থাকবে তাদের মেয়ে এই আশায় কলকাতায় গ্রীনডোরের ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের সহায়তায় অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাার মাধ্যমে মল্লিকার বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপিত করা হয় অসুস্থ অন্য তিনজনের দেহে। মল্লিকার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিলিগুড়ির সূর্যসেন কলোনী ও মল্লিকার বিদ্যালয়ে।
এ বিষয়ে স্থানীয় মানুষ ও মল্লিকার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সূর্য্যসেন কলোনী ই ব্লকের বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক মানিক মজুমদারের স্ত্রী ,এক ছেলে ও মেয়ে কে নিয়ে আর্থিক অনটনের মধ্যে চলছিল সংসার।। মানিক বাবুর পনেরো বছরের মেয়ে মল্লিকা মজুমদার নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে কলোনী বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।সে বেশকিছুদিন ধরেই কানের রোগে ভুগছিল। কিছুদিন আাগে একদিন হঠাৎ স্কুলে মাথা ঘুরে পড়ে যায় মল্লিকা।তার পর তাকে শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে আারও ভালো চিকিৎসার জন্য কলকাতার এস এস কে এম – এ পাাঠানোর পরামর্শ দেয়৷ এ মাসের ১লা আগস্টে মল্লিকাকে কলকাতার এস এস কে এম – এ ভর্তি করায় সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তার।কানে সংক্রমণ নিয়ে শিলিগুড়ি মল্লিকার চিকিৎসা চলা কালীন সেখান থেকে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। তার মস্তিষ্কের কোষ ও টিস্যু শুকিয়ে যেতে থাকে। এর ফলে শারীরিক অবনতি ঘটে মল্লিকার। গত ১৩ই আগস্ট মল্লিকার পরিবারের লোকদের এবিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয় ঐ হাসপাতাল থেকে৷এর পর শুক্রবার এসএসকেএম হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড বসে এবং সেখানে মল্লিকা কে ব্রেন ডেথ বলে ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে মল্লিকার পরিবার কে মল্লিকার অঙ্গ দান করা নিয়ে সম্মতি চাওয়া হয়। প্রথম দিকে মল্লিকার পরিবার অঙ্গদানের ব্যাপারে রাজি ছিলনা ।কিন্তু পরে মল্লিকার অঙ্গ দানের মধ্যে দিয়ে অন্যের দেহে জীবিত থাকবে তাদের মল্লিকা এবং নতুন জীবন ফিরে পাবে অন্য কয়টি মানুষ এই ভেবেই শোকের মধ্যেই রাজি হয়ে যায় মল্লিকার অভিভাবকেরা এবং তার পরিবার।
পরিবারের সম্মতিতে অঙ্গদানের ব্যবস্থা করেন এস এস কে এম – এর কতৃপক্ষ এবং এবিষয়ে দায়ীত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা।
লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য হায়দরাবাদ থেকে অজয় রামাকান্ত নায়েককে (গ্রহিতা) নিয়ে আসা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। গতকাল রাতেই এসএসকেএম-এ অঙ্গ বের করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।গ্রীনরোডের মাধ্যমে মল্লিকার অঙ্গ ঠিক সময়ে পৌঁছে যায় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে । রামাকান্তের শরীরে সফল ভাবে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎকরা।
অন্যদিকে মল্লিকার দু`টি কিডনি এসএসকেএম-এ ভর্তি দুই রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনও সফলভাবে করা হয়েছে বলেও জানানো হয় । কিডনি গ্রহিতারা হলেন খড়দার বাসিন্দা মৌমিতা চক্রবর্তী এবং সোদপুরের বাসিন্দা সঞ্জীব দাস। আরও জানা যায়, মল্লিকার রেটিনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। ত্বকের কোষ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে এসএসকেএমে-র স্কিন ব্যাংকে। তবে হার্ট প্রতিস্থাপণের জন্য কাউকে না পাওয়ায় তা দেওয়া যায়নি।
মল্লিকার মৃত্যুর খবরের পর শোকের ছায়া নেমে আসে শিলিগুড়ির ঐ এলাকায় । শোকাহত পরিবারের লোকজন, তার অধিকাংশ সহপাঠিনী, শিক্ষিকারা এবং এলাবাসিরারা কিছুতেই মল্লিকার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেনা ।
মল্লিকার এই মৃত্যুতে তার পরিবারের চোখের জলের মাঝেই মল্লিকার অঙ্গ দান উত্তরবঙ্গের তথা শিলিগুড়িত নজিরবিহীন একটি বিরল ঘটনা হিসেবে লেখা থাকবে।