Uncategorized

সরকারি স্কুলে এবার মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই

প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাঃ- পশ্চিমবঙ্গের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির গ্রন্থাগারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ১৯টি বই বাধ্যতামূলকভাবে রাখার নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য সরকার। সেই তালিকায় আইনস্টাইন, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের বইয়ের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বইগুলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্কুলগুলির গ্রন্থাগার উন্নয়নের জন্য প্রতি স্কুলে ১ লক্ষ টাকার অনুদানও ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য শিক্ষা দফতর ইতিমধ্যেই এই তালিকা ও নির্দেশিকা স্কুলগুলিতে পাঠিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পঠন সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং তাদের বিশ্বমানের জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত করানো। তবে বিশ্বমানের জ্ঞানের সাথে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বই বাধ্যতামূলক করার কি সম্পর্ক তা বোধগম্য হয়নি সাধারণ মানুষদের !
আইনস্টাইন, বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগরের মতো ব্যক্তিত্বদের বইয়ের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বইগুলি ছাত্রছাত্রীদের বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ইতিহাস বুঝতে সাহায্য করবে।” তিনি আরও জানান, প্রতি স্কুলে ১ লক্ষ টাকার অনুদান গ্রন্থাগারের পরিকাঠামো উন্নয়ন, বই ক্রয় এবং ডিজিটাল সুবিধা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বইগুলির মধ্যে কবিতা, গদ্য, রাজনৈতিক প্রবন্ধ, এবং সামাজিক বিষয়ের উপর রচনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলি হল ‘উপেক্ষিত’, ‘মানুষের পাশে’, ‘জনগণের সঙ্গে’, এবং ‘হৃদয়ের কথা’।
এই বইগুলি তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক সংস্কার, এবং বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর আলোকপাত করে। শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এই ১৯টি বই প্রতিটি স্কুলের গ্রন্থাগারে অবশ্যই রাখতে হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের পড়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও, এটি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় তুলে এই নির্দেশকে “রাজনৈতিক প্রচার” হিসেবে কটাক্ষ করা হয়েছে। বিরোধীরা বলছেন “স্কুল গ্রন্থাগারে আইনস্টাইন, বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগরের বই থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বই বাধ্যতামূলক করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এটি শিক্ষার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।” আরও বলেন, “১ লক্ষ টাকার অনুদান স্বাগতযোগ্য, কিন্তু এই অর্থ কি সত্যিই গ্রন্থাগারের উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে, নাকি শাসক দলের প্রচারে?” সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনীতির হাতিয়ার করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের বিশ্বমানের জ্ঞান দেওয়ার পরিবর্তে শাসক দলের নেতার বই পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।”
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই সমালোচনার জবাবে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বইগুলি বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। এগুলি পড়লে ছাত্রছাত্রীরা তাঁর দর্শন ও বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। বিরোধীরা শুধু রাজনীতি করার জন্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।” আরও বলেন, “১ লক্ষ টাকার অনুদান গ্রন্থাগারের আধুনিকীকরণে সহায়ক হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের পঠনের পরিবেশ উন্নত করবে।”
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গেছে, গ্রন্থাগারের জন্য বইয়ের তালিকায় বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, এবং সংস্কৃতির উপর বই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনস্টাইনের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাজ আই সি ইট’, স্বামী বিবেকানন্দের ‘কর্মযোগ’, এবং বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’-এর মতো বইগুলি ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় সহায়ক হবে। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর বই বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
কলকাতার একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অনুদানের ঘোষণা ইতিবাচক, কিন্তু বইয়ের তালিকায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বই বাধ্যতামূলক করা শিক্ষার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আমরা চাই ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনভাবে জ্ঞান অর্জন করুক।” অপরদিকে, একজন অভিভাবক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বই পড়লে বাংলার রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে জানা যাবে, তবে এটি বাধ্যতামূলক না করে ঐচ্ছিক করা উচিত ছিল।”
রাজ্যের শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, গ্রন্থাগারের জন্য বরাদ্দ অর্থ স্বচ্ছভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্কুলগুলিকে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এছাড়া, গ্রন্থাগারে ডিজিটাল ক্যাটালগ এবং ই-বুকের সুবিধা চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের কৌশল হতে পারে। একজন বিশ্লেষক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বই বাধ্যতামূলক করা রাজনৈতিক প্রচারের একটি উপায়।
তবে, অনুদানের ঘোষণা শিক্ষার পরিকাঠামো (Mamata) উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের উদ্যোগ শাসক দলের ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশিকা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা দফতর জেলা শিক্ষা আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
স্কুলগুলিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে গ্রন্থাগারে নির্দিষ্ট বই সংগ্রহ এবং অনুদানের ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তবে, এই সিদ্ধান্ত কতটা নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত রয়েছে।

Comment here