নীলরতন সরকার হাসপাতালে সোমবার রাতে রোগী মৃত্যুর কারণে রোগীর বাড়ির পরিজনের হাতে নিগৃহীত হয়ে মার খেতে হয় জুনিয়ার ডাক্তারদের। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকালে দু’ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নরা। জরুরী পরিষেবা চালু রাখেন সিনিয়র ডাক্তাররা। চিকিৎসকদের সাতটি সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম “জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস” সারা রাজ্যে আগামীকাল বুধবার সকাল ন’টা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত সরকারি এবং বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালে ওপিডি অর্থাৎ বহির্বিভাগ পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাতে। ট্যাংরার বিবিবাগানের মোহাম্মদ শাহিদ (৬৫) অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হন নীলরতন সরকার হাসপাতালে। সোমবার বিকেলের পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হলে তার পরিজনরা চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চড়াও হন। তাদের হাত থেকে রেহাই পান না নার্সরাও। উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। এন্টালী থানার পুলিশ এসে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রন করতে লাঠিচার্জও করে এবং অভিযুক্ত সন্দেহে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। উত্তেজিত জনতা হাতের সামনে ইটপাটকেল যা পেয়েছে তাই দিয়ে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে। তাতে নীলরতন সরকার হাসপাতালের দুই ইন্টার্ন পরিবহ মুখোপাধ্যায় এবং যশ টেকওয়ানি গুরুতর আহত হয়। পরিবহ’র মাথায় ফ্রন্টাল লোবে গভীর আঘাত হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয়েছে মল্লিক বাজার-এর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস-এ। পরিবহ’র অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও আপাতত বিপন্মুক্ত। যশ মাথায় হাতে আঘাত নিয়ে এনআরএস-এ ভর্তি। ঘটনার পর থেকেই এনআরএস-এর জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়। দফায় দফায় পুলিশ এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাতে সমাধান সূত্র বার হয়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ আরো গুরুতর আকার ধারণ করে। আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা এনআরএস-এর জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে এসে দাঁড়ায়। অবস্থা ঘোরালো হওয়াতে আলোচনার জন্য এনআরএস-এ পৌঁছান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী নির্মল মাজি, পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ডাক্তার প্রদীপ মিত্র। নির্মল মাজি এসে পৌঁছানো মাত্র জুনিয়র ডাক্তাররা পোস্টারসহ মূল গেট আটকে বিক্ষোভ দেখান। বিকাল পর্যন্ত সমাধান সূত্র না পাওয়াতে দু’ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয় ওপিডিতে। কর্মবিরতিতে শামিল হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সাগর দত্ত হাসপাতাল, মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কল্যাণী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

Comment here