প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাঃ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘পাল্টা কর্মসূচির’ যে বিজেপি চালু করেছেন তার জন্য সরাসরি গেরুয়া শিবিরকে দায়ী করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের মঞ্চ থেকে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিলেন যে, এবার বিজেপির দেখানো পথেই ‘বিজেপির গোলে শট’ মারবেন তিনি।
কার্যত এই দিন থেকেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
দীর্ঘ বহু বছর ধরে ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ২১শে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ পালন করে আসছে তৃণমূল, যা তাহাদের সবচেয়ে বড় বাৎসরিক রাজনৈতিক কর্মসূচি। গত কয়েক বছর ধরেই বিজেপি ২১শে জুলাই পাল্টা কর্মসূচি আয়োজনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল। এই বছর অবশ্য গেরুয়া শিবির কোমর বেঁধেই মাঠে নেমেছিল, উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী এবং দক্ষিণে দিলীপ ঘোষ তৃণমূলের ‘২১শে জুলাই সমাবেশ’-এর পাল্টা কর্মসূচি করে তৃণমূলকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
ধর্মতলার মঞ্চ থেকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কোনও কর্মসূচি করলে পাল্টা কর্মসূচি করতে হয় বিজেপিকে। এই বার বিজেপি যেদিন কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কর্মসূচি করবে, সেদিন আমাদেরও কোনও না কোনো কর্মসূচি থাকবে।”
রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ হলো, মমতার এই হুঁশিয়ারি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের আনাগোনা রাজ্যে বাড়বে। সেক্ষেত্রে তাদের সভার দিন তৃণমূলও পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়ে রাখতে পারে। মমতা এদিন বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, “তুমি আমাদের পথ দেখিয়েছ। আমরা পথটা দেখে দিশা নিয়েছি।”
তবে তৃণমূলের ‘২১শে জুলাই’ কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি করে বিজেপির আদপে কতটা লাভ হয়েছে, তা নিয়ে গেরুয়া ব্রিগেডেই সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে বিজেপির শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভা থেকে প্রত্যাশিতভাবে তৃণমূলকে বিঁধলেও, নব্য বিজেপির একাংশকেও ছেড়ে কথা বলেননি দিলীপ ঘোষ। তার মন্তব্য বঙ্গ-বিজেপি নেতৃত্বকে নতুন বিড়ম্বনায় ফেলেছে। ওই সভা থেকে দিলীপ ঘোষ বলেন, “গতবার একটু ঢিলে দিয়েছিলাম, অনেকে ঢুকেছেন,আবার চলেও গিয়েছেন। আর এ সব হতে দেবো না। যারা লোকের জমি-বাড়ি বিক্রির টাকা, গয়না বিক্রি করার টাকা নিয়ে শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের পথে বসিয়েছে, তাদের দলে নেওয়া হবে না।”
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে এদিন ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ করেন শুভেন্দু অধিকারী। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিজেপি নেতা-কর্মীরা সেখানে অংশ নেন। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, “এদিন দিলীপ ঘোষের কর্মসূচির থেকে শুভেন্দু অধিকারীর উত্তরকন্যা অভিযানে বেশি লোক হয়েছিল। তবে এই সবকিছুর পরেও আগামী ৪ঠা অগস্ট ফের উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন উত্তরকন্যা অভিযানের পরে শিলিগুড়ির কাছে ফুলবাড়ির চুনাভাটিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি জানান, ৪ঠা অগস্টের অভিযানে দলের ৬৫ জন বিধায়ক যোগ দেবেন। শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ২৬-এর নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে ছাড়ব।”
এছাড়াও, আগামী ৯ই অগস্ট নাগরিক সমাজের তরফে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানের আয়োজনে বিজেপি যে প্রধান ভূমিকা নেবে, তাও জানিয়েছেন শুভেন্দু। তবে এদিন ধর্মতলার মঞ্চ থেকে বিজেপির নাম না করে মমতা প্রশ্ন করেন, “কথায় কথায় আমার বাড়ির সামনে বসে যাওয়া, কথায় কথায় নবান্ন অভিযান – তাহলে আপনার নেতার বাড়ির সামনে অভিযান হবে না কেন?”
সামনে বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, পাল্টা কর্মসূচির এই রাজনীতি বঙ্গ-ভূমিকায় আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Comment here