প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাঃ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনেই ২৪ ঘন্টার মধ্যে শুরু হলো কাজ! ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের ডঙ্কা বাজার বহু আগেই বাংলা থেকে ‘ভূতুড়ে ভোটার’ বিদায় করার কাজ শুরু করে দিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা তথ্য অনুসারে, সেই কাজ শুরু করা হল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা এলাকা থেকেই!
তৃণমূল সূত্রে দাবি, নেত্রীর নির্দেশ মেনে এই কাজ করতে মাঠে নামছেন স্বয়ং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিম। এই কাজ শনিবার অর্থাৎ ১ মার্চ, ২০২৫ থেকে শুরু করতে চলেছেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুর থেকেই ভোটার তালিকার স্ক্রুটিনি শুরু হবে। বিজেপি ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে, সেই এলাকার অন্তত ২০-২৫ হাজার হিন্দু ভোটারদের নাম বাদ দিতেই এই কাজ শুরু করছে তৃণমূল। এদিন পুরসভায় সাংবাদিক বৈঠক থেকে ফিরহাদ হাকিম এই প্রসঙ্গে বলেন, “ওরা (বিজেপি) মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ করতে চায়, আমরা সবাইকে নিয়ে চলার পক্ষে। গুজরাতি, বিহারি, শিখ সবাই আমার ভোটার।” গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চেয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান মেয়র।
বিজেপিকে নিশানা করে ফিরহাদের মন্তব্য, “গণতন্ত্র যাতে সত্যিকারের হয়, গণতন্ত্র নিয়ে যাতে সকলে বাঁচতে পারে, গণতন্ত্র যাতে হরণ না হয়ে যায়, সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। কোনও সম্প্রদায় বা ভাষা প্রসঙ্গে বলেননি। ওসব ভেদাভেদ বিজেপি করে।” প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বাড়িতে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও আট জন কাউন্সিলরকে ডেকে এ ব্যাপারে আরও একপ্রস্থ বৈঠক করেছিলেন।
এই বৈঠকে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন মমতা। নির্দেশ দেন, তার মধ্যেই ভূতুড়ে ভোটারদের চিহ্নিত করে তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। মমতা নির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেন, প্রত্যকটি অঞ্চল, ব্লক ঘুরে ঘুরে ভোটার তালিকা মিলিয়ে তথ্য যাচাই করতে হবে। স্ক্রুটিনি করে জানতে হবে কে প্রকৃত ভোটার, আর কে তা নয়। সবশেষে ভুয়ো ভোটারদের সেই তালিকা তুলে দেওয়া হবে নির্বাচন কমিশনকে। কলকাতার মেয়র নিজেই সেকথা জানিয়েছেন। তবে, শুধু দলীয় কর্মীরা নন, ভুতুড়ে ভোটার ধরতে শনিবার থেকে ভোটার তালিকা স্ক্রুটিনি কাজ করবেন মেয়র নিজেও। নিজেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য অনুসন্ধান ও যাচাই করবেন তিনি।
তীব্র প্রতিবাদ বিজেপির
তৃণমূলের এই ভোটার লিস্ট পরিষ্কার করার কর্মসূচির পাল্টা মমতা এবং অভিষেকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিষয়াবলী সংক্রান্ত সংস্থা ‘আই প্যাক’কে কাজে) লাগিয়ে হিন্দিভাষী হিন্দু ভোটারদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন অগ্নিমিত্রা পাল এবং সুকান্ত মজুমদার। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল লিখেছেন, “ভোটার তালিকা থেকে হিন্দুদের নাম বাদ দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উঠেপড়ে লেগেছেন। ওনার টার্গেট অবাঙালি হিন্দু ভোটার। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে মমতা বলেছেন, মুর্শিদাবাদের ভোটার তালিকায় নাকি ‘ভুয়ো’ ভোটার ঢোকানো হয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যে বলেছেন উনি। ভোটার তালিকা থেকে অনলাইনে কারোর নাম ঢোকানো বা বাদ দেওয়া যায়না। এটা উনি ভালোই জানেন। তবু বলেছেন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে। মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের উনি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে রাখতে চান। বেছে বেছে মুর্শিদাবাদ আর গঙ্গারামপুরের নাম বলেছেন। আবার একসঙ্গে এনআরসি যোগ করে সংখ্যালঘুদের জুজু দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন। তিনি আরও লিখেছেন,’হিন্দুরা একজোট হচ্ছে। তাই উনি পরিকল্পনা করছেন দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে হিন্দুদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেবেন। নাম তোলেন রাজ্য সরকারের কর্মীরা। যাঁরা অনেকেই তৃণমূলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। বিজেপির তরফে নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার ভুয়ো ভোটারের তালিকা দিয়ে আসা হয়েছে। রাজ্যের ভোটার তালিকায় ১৬ লক্ষ ৯১ হাজার ১৩২ ভুয়ো নাম রয়েছে। কমিশনে অভিযোগ করেছে বিজেপি। পঞ্চায়েতে ১ কোটি গ্রামের মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সবাই সতর্ক থাকুন। আমি সকলকে আবেদন করছি, ভোটার তালিকার দিকে নজর রাখুন। মমতা ঝুলি থেকে বিড়ালটা বের করে দিয়েছেন। উনি হিন্দু ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। সতর্ক থাকুন।’
সুকান্ত মজুমদার একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘ভোটের প্রায় এক বছর আগে, মমতা ব্যানার্জি ভোটার লিস্ট নিয়ে তার পার্টির কর্মীদের কাছে যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে আমার মনে হয় বাঙালি হিন্দুদের আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত । আমি দেখতে পাচ্ছি মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জি আইপ্যাককে নিয়ে পরিকল্পনা করছেন যাতে আগামী দিনে হিন্দু বাঙ্গালীদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে কেটে বাদ দেয়া যায় । বিশেষ করে কলকাতা, হাওড়া, শ্রীরামপুর প্রভৃতি জায়গায় প্রচুর হিন্দিভাষী হিন্দুদের ভোট আছে। এই হিন্দিভাষী হিন্দুদের ভোট কাটার জন্য এখন থেকে পরিকল্পনা চলছে। তাই আমি সমস্ত হিন্দু বাঙ্গালীদের কে এবং অন্যান্য হিন্দুদেরকে অনুরোধ করছি যে ভোটার লিস্ট সংশোধন হলেই তাতে আপনাদের নাম আছে কিনা দেখে নিন । আপনাদের গণতান্ত্রিক এই অধিকারকে মমতা ব্যানার্জি আর তার দলবল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
Comment here