প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাঃ চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য ১৩ জন প্রতিনিধির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এই প্রতিনিধিদের কীভাবে নির্বাচন করা হয়েছে বা তাঁরা কারা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে চাকরিহারাদের একটি বড় অংশের মধ্যে।
তাঁদের অভিযোগ, প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রক্রিয়া তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়।
একই সুর শোনা গেল রাজ্য সরকারি চাকরিজীবীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের গলাতেও। তাঁদের পক্ষ থেকে সুমন বিশ্বাসের নাম পাঠানো হলেও, সেই নামটি গৃহীত হয়নি বলে জানা গিয়েছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্য রাজীব দত্ত জানান, এর আগেও নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় একই ঘটনা ঘটেছিল। তাঁদের সংগঠনের প্রতিনিধিকে মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। প্রতিনিধিদের বাছাইয়ের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রাজীব দত্ত আরও দাবি করেন, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রবেশের পাস নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেখানে পাস বিক্রির অভিযোগও ওঠে। এবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ক্ষেত্রেও অস্বচ্ছভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। এর ফলে চাকরিহারাদের সকলের বার্তা সরকারের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করছে সংগঠন।
তাহলে এখন দাবি কী?
সংগঠনের প্রতিনিধি রাজীব দত্ত স্পষ্ট ভাষায় তাঁদের মূল দাবিগুলি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে ওএমআর (OMR) শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশ করা হোক। সরকার আদালতে অযোগ্যদের তালিকা দিয়েছে, কিন্তু পাশাপাশি এও বলেছে যে আরও অযোগ্য প্রার্থী থাকতে পারে। সেই কারণে সম্পূর্ণ যোগ্য ও অযোগ্যদের একটি স্পষ্ট তালিকা প্রকাশ করা হোক।’ চাকরিহারাদের একাংশের সুরেই সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রশ্ন, ‘তবে কি অযোগ্যদের আড়াল করতেই এত রাখঢাক?’
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ মূলত ডিএ আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিচিতি লাভ করেছে। চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরাও রাজ্য সরকারের বেতন কাঠামোর আওতায় পড়েন। সেই কারণেই এই সংগঠনে তাঁদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ২০১৬ সালের এসএসসির গোটা প্যানেল সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের হয়েও আইনি ও সাংগঠনিক লড়াইয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
মুখ্যমন্ত্রীর সভা এবং শিক্ষামন্ত্রীর আজকের বৈঠক – এই দুই ক্ষেত্রেই সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের কোনও প্রতিনিধি স্থান পাননি। এই পরিস্থিতিতে রাজীব দত্ত জানান, ‘গতকাল থেকে চাকরিহারারা অনশনে বসেছেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের কাছে নিজেদের ন্যায্য দাবিদাওয়া পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা।’
শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরাও আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন। এদিন আলোচনায় কোনও সুনির্দিষ্ট সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসে কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।
অন্যদিকে, আজকের বৈঠকের আগে, শুক্রবার দুপুর ১২টায় চাকরিহারারা স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) দফতর অভিযানের ডাক দিয়েছেন। সল্টলেকের করুণাময়ী চত্বরে তাঁদের জমায়েত হওয়ার কথা এবং সেখান থেকে মিছিল করে এসএসসি দফতরের দিকে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
Comment here