স্কুল চত্বরেই ছাত্রীর আত্মহত্যা ঘিরে চাঞ্চল্য,উঠছে স্কুল কতৃপক্ষের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন
শুভাশিস ঘোষ-আবারো খবরের শিরনাম হলো এই শহরের এক কর্পোরেট প্রথম সারির স্কুল দক্ষিণ কোলকাতার রানীকুটির জি ডি বিড়লা।সমাজের এলিট শ্রেনীর প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকা এই স্কুলের বিদ্যার্জনে যে নয় নয় করে মোটা অঙ্কের টাকা খসাতে হয়,তা বলাই বাহুল্য।যেখানে অধিকাংশ স্বনামধন্য স্ব স্ব ক্ষেত্রে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত মা বাবাদের আদরের ধন একমাত্র ছেলে মেয়েদের এখানে পড়াশুনা শিক্ষিয়ে ভবিষ্যতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার বাসনাটা প্রায় মানসিক রোগের আকার ধারন করে।যারই কারনে ভর্তির ফিজ থেকে মাস মাইনেসহ বছরের বিভিন্ন সময় স্কুল কর্তৃপক্ষের নানা আবদারে অর্থের যোগানটাও থাকে সম পরিমাণ।কিন্তু এসব সত্বেও এইসব কর্পোরেট স্কুলগুলির অভ্যন্তরে ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তা কতটুকু সেই প্রশ্নে একশোয় শুন্য পাওয়া স্কুলগুলি সম্পর্কে সরকার কেন দিনের পর দিন নীরব থাকেন এখন সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।প্রশ্ন হলো রানীকুটির এই স্কুলের বিরুদ্ধে এর আগেও একটি বাচ্চা মেয়েকে যৌন হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছিল স্কুলেরই এক পিটি স্যারের বিরুদ্ধে।তাই নিয়ে গোটা দেশ জুরেই হৈচৈ কিছু কম হয়নি।কিন্তু সে সব কিছুই কালের নিয়মে সময়ের ব্যাবধান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছে অজানার অন্ধকার কুঠুরিতে।যা নিয়ে রাজ্যে বিদ্ধজন সমাজ তখনকার মতো রে রে করে উঠলেও পরবর্তিতে ক্যামেরার ফ্লাসগান হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের সব প্রতিবাদ হারিয়ে গিয়েছিল।কিন্তু সেদিনের সেই অবক্ষয় যে এতটুকু কমেনি তা আরো একবার চোখে আঙল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল দশম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী কৃতিকা।মা বাবার এটি মাত্র সন্তান।স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা মা বাবার স্বপ্নের সব প্রাচীরই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় গত ২১ জুন সকালে।এইদিন হতভাগ্য মেয়েটির লাশ উদ্ধার হয় তারই স্কুলের বাথরুম থেকে হাতের শিরা কাটা অবস্হায়।ঘটনায় প্রকাশ এদিন আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল কৃতিকা।তার বন্ধুদের বক্তব্য অনুযায়ী একদমই নরমাল ছিল যেখানে কোন রকম অস্বাভাবিকতা তার এদিনের ব্যবহারে দেখা যায়নি।যেটাই ভাবাচ্ছে বর্তমান মনস্তাত্ববিদদের। শতকরা একশো ভাগ নির্লিপ্ত থেকে কিভাবে একটি বছর দশের মেয়ে এত ঠান্ডা মাথায় নিজের মৃত্যুকে নিশ্চিন্তে বরণ করে নিলো? নাকি এর ভিতর অন্য কোন রহস্য আছে?প্রশ্নতো উঠবেই চতুর্থ ক্লাস শুরুর মুহুর্তে যে মেয়ে ওয়াশ রুমে যাওয়ার নাম করে গেল সে যখন পন্চম প্রিয়িডে ক্লাসে ফিরছে না সেটা দেখেও কি ক্লাস টিচারদের এতটুকু সন্দেহ হলো না।যেখানে ষষ্ঠ প্রিয়িডে হুশ এলো যখন তখন প্রায় দেড় ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে,ফলে শিরা থেকে অনর্গল রক্ত ক্ষরণের জেরে ততক্ষণে কৃতিকার মৃত্যু নিশ্চিত রুপ পেয়েছে।প্রশ্ন হলো কিভাবে ক্লাসের সবার দৃষ্টি এড়িয়ে হাতে সার্ফনার অর্থাৎ ধারালো ব্লেড নিয়ে ওয়াশরুমে গেল?এই জিনিষটা কারোর নজরে পড়লো না!শুধু তাই নয়,আরো প্রশ্ন আছে।কিভাবে সুইসাইড নোটের পাতা সে বাথরুমে পেল?যে লেখার বাধুনী বলে দেয় এধরনের পরিণত লেখনি একজন ক্লাস টেনের মেয়ের পক্ষে চটজলদি লিখে ফেলা আদৌ কি সম্ভব? যদিও আপাতত আত্ম হত্যার ত্বথে ভর করেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ,যেখানে শুরুতেই এধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে নিছক আত্ম হত্যার মোড়কে দেখানোটার আরো এক উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের সুনামে আঁচর না লাগতে দেওয়া।এজন্য স্হানীয় প্রশাসনের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষদের নেক্সাস বছরভর এক ধরনের সখ্যতার সেতু রচনা করে থাকে।না হলে তিন মাস ঘুমুতে না পাড়া মেয়েটির চোখমুখের দিকে তাকিয়ে এতটুকু তার স্কুলের দিদিমণি থেকে পড়ুয়াদের অভিভাবকগন এমনকি তার মা বাবাও বুঝতে পারলেন না যে ওই ছোট্ট মেয়েটি মানসিক বিপর্ষয়ের কোন খাদের কিনারায় পৌছে গেছে যেখান থেকে তার ফেরার আর কোন পথ ছিল না একমাত্র আত্মহত্যা করা ছাড়া!শুনলে আশ্চর্ষ হতে হয় এই ভেবেই প্রতিদিন এই শহরের এরকমই হাজার হাজার কৃতিকারা আজ আলোর সন্ধান না পেয়ে প্রতি মুহুর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে একাকিত্মের অতল গহ্বরে।যেখানে একটাই ঠিকানা লেখা থাকে আর তাহল সাকসেশ সাকসেশ এন্ড সাকসেশ।
Comment here