মুক্তিযোদ্ধাঃ স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক পদত্যাগ ভারতের রাজনৈতিক মহলে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। জগদীপ ধনখড় একই সঙ্গে উপরাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন, ফলে তাঁর পদত্যাগের পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদ শূন্য হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, দেশের সাংবিধানিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যত দ্রুত সম্ভব এই পদ দুটি পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, যদি উপরাষ্ট্রপতি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন, তবে তাঁর শূন্য পদ পূরণের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হয়। এই নির্বাচন শূন্য হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া উচিত। এই নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত, উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব, বিশেষ করে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান অথবা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত রাজ্যসভার অন্য কোনো সদস্য দ্বারা পালন করা হয়।
বর্তমানে, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন হরিবংশ নারায়ণ সিং। তিনি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ধনখড়ের পদত্যাগের পর, তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে, যদি না রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রাজ্যসভার অন্য কোনো সিনিয়র সদস্যের কাছে এই দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে, হরিবংশ নারায়ণ সিংকে রাজ্যসভা পরিচালনার পাশাপাশি উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্বও পালন করতে হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন নিয়োগ নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬ মাসের জন্য থাকবে এবং এর পর তিনি তাঁর পুরনো পদে পুনর্বহাল হবেন।
হরিবংশ নারায়ণ সিং একজন জেডিইউ (জনতা দল ইউনাইটেড) নেতা, যিনি সাংবাদিকতা থেকে রাজনীতিতে এসেছেন। তাঁকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। তিনি বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ এবং রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান। জয়প্রকাশ নারায়ণ (জেপি) আন্দোলনের দ্বারা তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন এবং ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। জেডিইউ তাকে ২০১৪ সালে রাজ্যসভার জন্য মনোনীত করে এরপর, তিনি ২০২০ সালে আবারও রাজ্যসভার সদস্য হন। তাঁর বর্তমান মেয়াদ আগামী বছর ২০২৬ সাল পর্যন্ত রয়েছে।
এদিকে, পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য বেশ কয়েকটি নাম সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নামও এই আলোচনায় উঠে আসছে। অনেকে মনে করছেন যে উত্তর প্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনোজ সিনহাকে বিজেপি এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে পারে। একইসঙ্গে, বিহারের আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নীতীশ কুমারকেও এই পদ দেওয়া হতে পারে বলে জল্পনা চলছে।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কেবল লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদরা অংশগ্রহণ করেন। মনোনীত সদস্যরাও এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লোকসভার সাংসদ এবং সমস্ত রাজ্য বিধানসভার বিধায়করা ভোট দেন।
উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে। তাঁর বয়স ৩৫ বছরের বেশি হতে হবে এবং রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাঁকে সমস্ত যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীকে ১৫,০০০ টাকা জামানত জমা দিতে হয়। এই অর্থ একটি নিরাপত্তা জামানতের মতো কাজ করে এবং প্রার্থী যদি নির্বাচনে হেরে যান বা মোট বৈধ ভোটের ১/৬ অংশ না পান, তবে এই পরিমাণ অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়।
জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক পদত্যাগ ভারতের রাজনীতিতে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি কে হন তা দেখার জন্য রাজনৈতিক মহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে
Comment here